বৈশ্বিক ডিভাইস বাজারে স্যামসাং ও অ্যাপল একে অপরের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী, যা প্রযুক্তি বিশ্বে সবার জানা। ডিভাইস বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও অ্যাপলের জনপ্রিয় আইফোনের অর্গানিক লাইট-এমিটিং ডায়োড বা ওএলইডি ডিসপ্লে সরবরাহ করে আসছে স্যামসাং। তবে সাম্প্রতিক সময় ওএলইডি ডিসপ্লের জন্য স্যামসাং নির্ভরতা কমাতে চাইছে অ্যাপল। এরই অংশ হিসেবে অন্য নির্মাতাদের কাছে থেকে ওএলইডি ডিসপ্লে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে স্যামসাং আইফোনের পাশাপাশি অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেও ওএলইডি ডিসপ্লে সরবরাহ করে আসছে। ডিসপ্লে সাপ্লাই চেইন কনসালট্যান্টের (ডিএসসিসি) তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ৯টু৫ম্যাক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ক্রয়াদেশের চেয়ে কমসংখ্যক ইউনিট ওএলইডি ডিসপ্লে প্যানেল নেয়ায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে স্যামসাংকে ৯৫ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে অ্যাপল।
কভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা বিভিন্ন খাতের মতো স্মার্টফোন বাজারেও বড় আকারে প্রভাব ফেলেছে। গত বছরের শেষদিকে চীনের উহানে প্রাদুর্ভাব হলেও নভেল করোনাভাইরাস খুব দ্রুত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বাধ্য হয়ে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ লকডাউন ঘোষণা করে। স্থবির হয়ে পড়ে বৈশ্বিক অর্থনীতির চাকা। এর ফলে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো তাদের উৎপাদন কার্যক্রম থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রয় আউটলেট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। এর প্রভাব পড়ে স্মার্টফোন বিক্রিতে। কভিড-১৯ মহামারীর শুরুর দিকে চীনে আইফোন উৎপাদন ব্যাহত হয়। কর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তার স্বার্থে অ্যাপলের আউটলেটগুলো বন্ধ করা হয়। এরপর বিশ্বজুড়ে অ্যাপলের আউটলেট বন্ধ করা হয়। ফলে ব্যয়বহুল আইফোনের বিক্রি কমে যায়। বাধ্য হয়ে ক্রয়াদেশের বিপরীতে স্যামসাংয়ের কাছ থেকে সামান্যসংখ্যক ওএলইডি ডিসপ্লে ক্রয় করে অ্যাপল। যে কারণে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের ওএলইডি ডিসপ্লে প্যানেল ব্যবসায় ভাটা পড়ে।
স্যামসাংয়ের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) আর্থিক খতিয়ান বিশ্লেষণ করে ডিএসসিসি জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা আয় করেছে। ডিসপ্লে ব্যবসা বিভাগের জন্য প্রাপ্ত এককালীন ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা সেখানে উল্লেখ ছিল। তবে ক্রয়াদেশ অনুযায়ী ওএলইডি সরবরাহ না নেয়ায় অ্যাপলসহ অন্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পেয়েছে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। অ্যাপলের কাছ থেকে ৯৫ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ পাওয়া বিষয়টি ডিএসসিসির অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাংয়ের ডিসপ্লে উৎপাদন বিভাগ স্যামসাং ডিসপ্লে। উন্নত প্রযুক্তির ডিসপ্লের কারণে স্যামসাং ডিসপ্লে এখন স্যামসাংয়ের ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। স্যামসাং ডিসপ্লে নতুন আঙ্গিকের আরো উন্নত ‘কোয়ান্টাম ডট’ ডিসপ্লে উৎপাদনে বিদ্যমান কারখানা এবং একটি উৎপাদন লাইন হালনাগাদে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার (১৩ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ওন) বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। গত বছর অক্টোবরে ঘোষণা করা পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরে এ অর্থ বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
স্যামসাং ডিসপ্লে, যা প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের বিভিন্ন ডিভাইসের অন্যতম ডিসপ্লে সরবরাহকারী। টেলিভিশন ও স্মার্টফোনের মতো ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের ডিসপ্লের বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে ডিসপ্লে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৫ সালের মধ্যে এ বিনিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে।
মোবাইল ডিভাইস, বিশেষ করে সেলফোন ও পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ ডিসপ্লে। বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যে এখন ওএলইডি ডিসপ্লে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। তবে লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লের (এলসিডি) চাহিদাও রয়েছে। ওএলইডি কিংবা এলসিডি যে ধরনের হোক, আল্ট্রা-ক্লিয়ার ডিসপ্লে ব্যবসাকে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ব্যবসার সুযোগ হিসেবে দেখছে স্যামসাং ডিসপ্লে। যে কারণে বিদ্যমান কারখানায় ডিসপ্লে প্যানেল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগের এ পরিকল্পনা।
বৈশ্বিক এলসিডি ডিসপ্লে বাজার কয়েক প্রান্তিক ধরে খারাপ সময় পার করছে। কারণ টেলিভিশন এবং স্মার্টফোনে এলসিডি ডিসপ্লের ব্যবহার কিছুটা কমেছে। চীনভিত্তিক ডিসপ্লে নির্মাতাদের কারণেও বাজারটিতে চাপে রয়েছে স্যামসাং ডিসপ্লে। বিদ্যমান পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ডিসপ্লে কারখানায় বড় অংকের বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েছে স্যামসাং ডিসপ্লে।
বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিপণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান ডিভাইস চাহিদার কথা বিবেচনা করে অনেক প্রতিষ্ঠান ডিসপ্লের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। স্যামসাং ডিসপ্লে এর মধ্যে অন্যতম। বৈশ্বিক ডিসপ্লে বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠানটির। এলসিডি এবং ওএলইডি ডিসপ্লে বাজারে আধিপত্য ধরে রাখতে এরই মধ্যে কারখানা স্থাপনে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার বিদ্যমান কারখানায় নতুন আঙ্গিকের আরো উন্নত কোয়ান্টাম ডট ডিসপ্লে উৎপাদন বাড়াতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছরের শুরু থেকে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে সরবরাহ ঘাটতিতে ডিসপ্লের চাহিদা কিছুটা কমেছে। তবে স্মার্টফোনের জন্য ডিসপ্লের চাহিদা কমলেও টিভি কিংবা অন্যান্য ডিভাইসের ডিসপ্লের চাহিদা স্বাভাবিক রয়েছে। বর্তমানে স্যামসাং মোট ছয়টি ডিসপ্লে কারখানা পরিচালনা করছে।