চীনভিত্তিক বাইটডান্স নিয়ন্ত্রিত শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের তোপের মুখে রয়েছে। টিকটক নিষিদ্ধে এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অ্যাপটির মার্কিন কার্যক্রম সেদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির নির্দেশ দিয়েছিলেন। নির্দেশনা মেনে মার্কিন কার্যক্রম ওরাকল করপোরেশন ও ওয়ালমার্টের কাছে বিক্রির লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে টিকটক কর্তৃপক্ষ। বিতর্কিত এ অধিগ্রহণ চুক্তিকে অনুমোদন দেবে না চীন বলে জানিয়েছে। খবর টেকক্র্যাঞ্চ।
গত সপ্তাহের শেষদিকে মার্কিন কার্যক্রম বিক্রির জন্য ওরাকল করপোরেশন ও ওয়ালমার্টের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে টিকটক। গত ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের নির্দেশ থাকলেও অধিগ্রহণ চুক্তিটির শর্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। টিকটক কর্তৃপক্ষ এ অধিগ্রহণ চুক্তির মূল্য ৬ হাজার কোটি ডলার (৬০ বিলিয়ন ডলার) নির্ধারণের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে।
চায়না ডেইলিতে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে দাবি করা হয়, টিকটক-ওরাকলের মধ্যে হওয়া ‘নোংরা এবং অন্যায্য’ চুক্তিতে অনুমোদন দেয়ার কোনো কারণ দেখছে না চীন। এ চুক্তির বলে অপকৌশলে টিকটকের মালিকানায় বসতে চলেছে ওরাকল ও ওয়ালমার্ট।
ওই সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়, বাইটডান্সের টিকটক খুব অল্প সময়ে ব্যবসায় সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো একটি অ্যাপ। চলতি বছর শেষ নাগাদ অ্যাপটির রাজস্ব আয় শতকোটি ডলারে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। টিকটকের এমন অভূতপূর্ব ব্যবসায় সাফল্য ওয়াশিংটনের অস্বস্তির প্রধান কারণ। যে কারণে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে টিকটক নিষিদ্ধে নির্বাহী আদেশে সই করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অপকৌশলে অ্যাপটির মার্কিন কার্যক্রমের মালিকানা বাগিয়ে নিতে বিক্রির জন্য চাপ দেয়া হয়।
চীন গত আগস্টের শুরুতেই জানায় অপকৌশলে টিকটক ছিনিয়ে নেয়া তারা মেনে নেবে না। টিকটক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো পদক্ষেপ তারা নাকচ করতে সক্ষম। টিকটক ইস্যুকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটনের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এমন বক্তব্য দিয়েছিল চীন।
চীনের দাবি, বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে প্রতিযোগিতা নয়; একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত হেনস্তার শিকার হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতি থামাতে একের পর এক অন্যায় অভিযোগ করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেক্কা দিতে সক্ষম সব চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন তথ্য নিরাপত্তার অভিযোগ তুলছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসার দিক থেকে দাবিয়ে রাখতে পরিকল্পিত ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে ওয়াশিংটন।
বেইজিং জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অজুহাত ও অপকৌশলের জবাব দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ ও পন্থা চীনের হাতে রয়েছে। চীন প্রশাসন তাদের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চালানো শুরু করলে তা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুব একটা ইতিবাচক হবে না।
সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে মনে হলে চীনভিত্তিক সফটওয়্যার জায়ান্টগুলোর বিষয়ে আগামীতেও ব্যবস্থা নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেন, টিকটক সরাসরি চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে তথ্য দিচ্ছে। যদিও চীন সরকারের সঙ্গে তথ্য শেয়ার বা চীন সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে টিকটক কর্তৃপক্ষ। এমন অভিযোগের পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণও উপস্থিত করতে পারেনি ট্রাম্প প্রশাসন।
মাইক পম্পেও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন চীনভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি বা তাদের সেবার বিষয়ে ক্রমান্বয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ধরনের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করছে, যারা চীন সরকারের কাছে তথ্য পাচার করছে বলে আমরা মনে করছি। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মধ্যে রয়েছে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্যাটার্ন, ঠিকানা, ফোন নম্বর ও কনট্যাক্ট।
ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের চলমান প্রযুক্তি যুদ্ধের সর্বশেষ দৃশ্যমান পদক্ষেপ হলো চীনভিত্তিক টিকটক ও মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিশোধ হিসেবে চীনও এখন বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার কথা ভাবছে। তাদের ভাষায় যেসব বিদেশী প্রতিষ্ঠান চীনের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে, সেগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এমন পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে।
প্রযুক্তি বিশ্বে চীনের ক্রমাগত আধিপত্যের লাগাম টেনে ধরতে কার্যক্রম জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রযুক্তি নিয়ে এ যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ঘনীভূত হতে শুরু করে চীনা জায়ান্ট হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন বাজার ও মিত্র দেশগুলোতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে। এর পরই একের পর এক হুয়াওয়েসহ চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পথে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তুলতে রীতিমতো উঠেপড়ে লাগে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
টিকটক ও উইচ্যাট ইস্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা আক্রমণ হিসেবে চীন বিদেশী প্রতিষ্ঠাগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার হুমকি দিল। যদিও এ হুমকি অ্যাপ দুটোকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা থেকে শেষ রক্ষা করতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে বেশকিছু বিদেশী কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা ভাবছে বেইজিং। টিকটক ও উইচ্যাট ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের জবাব দিতে অসংখ্য মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে পারে চীন। ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যে প্রযুক্তি খাতে আধিপত্য নিয়ে চলমান বিরোধের ফল খুব একটা ইতিবাচক হবে না বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।