সম্প্রতি বুলগেরিয়ায় হ্যাকাররা আয়কর বিভাগের কম্পিউটার হ্যাক করে পুরো জাতির ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। আর চলতি সপ্তাহে সে সকল মানুষের সকল ব্যক্তিগত তথ্য তারা অনলাইনে ফাঁস করে দিয়েছে। ফলে সাধারণ জনগণ শঙ্কা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
দেশটিতে এখন প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বাস করছে যাদের মধ্যে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ৫০ লাখের কিছু বেশি। আর এই ৫০ লাখ মানুষের তথ্যই হ্যাক হয়েছে। তবে এটি কি সরকারি কর্তৃপক্ষের অবহেলা নাকি হ্যাকারদের কৃতিত্ব, তা অবশ্য এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দেশটির আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে পুরো একটি জাতি হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার ঘটনাটি খুবই ব্যতিক্রম, তবে অভূতপূর্ব নয়। তবে শুধু বুলগেরিয়াতেই এমন ঘটনা ঘটছে, তা নয়। অনেকেই হয়তো জানেন না তাদের দেশ হ্যাকারদের কবলে পড়েছে।
দেশটির সরকারি আয়কর বিভাগে করদাতার ব্যক্তিগত তথ্যের বিস্তারিত থাকে। এর মধ্যে জন্মতারিখ, বাড়ির ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, আয়-ব্যয়ের খতিয়ান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও থাকে। তাই হ্যাকারদের কাছে এই ধরনের সার্ভার সবচেয়ে লোভনীয় লক্ষ্যে পরিণত হয়।
হ্যাকারদের কাছে সরকারি তথ্যভাণ্ডার বেশ লোভনীয়। এসব তথ্যভাণ্ডারে নাগরিকদের প্রচুর তথ্য থাকে, যা পরে নানা কাজে ব্যবহার করা যায় বা চড়া দামে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেওয়া যায় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
এ দিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ক্লিয়ারসুইফটের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা গাই বানকার বলেন, অনেকেই পাসওয়ার্ড দীর্ঘ ও জটিল করে অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত করতে পারে। কিন্তু সরকারের কাছে যে তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলোর নিরাপত্তায় কোনো প্রভাব পড়বে না। এছাড়া সরকারি সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্য সাধারণত অপরিবর্তনীয়। দীর্ঘমেয়াদে সেগুলো অপরিবর্তিত থাকে। যেমন— সরকার কারো জন্মতারিখ সাধারণত পরিবর্তন করবে না। তাছাড়া বাসার ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এসব তথ্য অনেকের ক্ষেত্রে ৫, ১০, ২০ বছর বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত একই থাকে। আর এজন্যই এসব তথ্যের কার্যকারিতা শিগগিরই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। হ্যাকাররা এমন তথ্যের জন্যই ওঁৎ পেতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষ হ্যাকাররা সাধারণত ডাটা চুরির কাজটি করে থাকে। তবে সাধারণত এমন হ্যাকিংয়ের ঘটনাগুলো এতোটা পরিকল্পিত ও জটিল হয় না। আর ডার্ক ওয়েবের অনেক হ্যাকিং টুল ও ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার দিয়ে সহজেই একেবারে কাঁচা হ্যাকারও বৃহৎ ডাটা চুরি করতে পারে।
অন্যদিকে গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় কঠোর আইন করা হয়েছে। ফলে বুলগেরিয়া সরকার বেশ বিপাকে পড়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
বুলগেরিয়ার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষাবিষয়ক কমিশন বলেছে, তারা এ ঘটনায় তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ ২০ বছর বয়সী এক সাইবার নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করেছে।
পূর্বেও ২০০৬ সালে হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাবিষয়ক দপ্তরের ডাটাবেজ হ্যাক করে ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়।
সূত্র: সিএনএন