কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব বিভিন্ন খাতের মতো বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু সে অনিশ্চয়তা অতিক্রমে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ইলেকট্রনিক জায়ান্ট স্যামসাং। চীনভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বী হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় স্মার্টফোন এবং চিপ ব্যবসা খাতে ব্যবসায় সাফল্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) স্যামসাংয়ের পরিচালন মুনাফায় উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। খবর ইটি টেলিকম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে পরিচালন মুনাফায় ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছে স্যামসাং। চূড়ান্ত আর্থিক খতিয়ান প্রকাশের আগে এক নিরীক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে পরিচালন মুনাফা ১২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ওনে (১ হাজার ৬০ কোটি ডলার) পৌঁছাবে। অথচ গত বছর একই প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা আয়ের অংকটা ছিল ৭ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ওন।
স্যামসাংয়ের দাবি, তারা জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিচালন মুনাফা আয় করতে যাচ্ছে এবং তা বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের ডামাডোলে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমেছে হুয়াওয়ের ওপর। এতে স্যামসাংয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য বাজার সম্প্র্রসারণের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। স্মার্টফোনের পাশাপাশি ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক বাজারে স্যামসাংয়ের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার কথা আগেই জানিয়েছিল ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ফিচ রেটিং।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করার পর সার্চ জায়ান্ট গুগল ও সফটব্যাংক গ্রুপের মালিকানাধীন চিপ ডিজাইনার প্রতিষ্ঠান এআরএম, তাইওয়ানভিত্তিক বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা টিএসএমসিসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে সরঞ্জাম সরবরাহ ও হালনাগাদ দেয়া স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।
একাধিক পণ্য সরবরাহকারীর এমন ঘোষণায় হুয়াওয়ে স্মরণকালের বিপজ্জনক সময় পার করছে। কারণ গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম পেলেও নিরাপত্তা হালনাগাদ ও স্বত্বযুক্ত সেবায় প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ায় মানুষ হুয়াওয়ের স্মার্টফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এছাড়া হুয়াওয়ের বেশির ভাগ নিজস্ব চিপ এআরএমের সহযোগিতায় নকশা করা হয়।
ফিচ রেটিং জানিয়েছে, গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চীনের বাইরে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রি ব্যাহত হতে শুরু করেছে, যা স্যামসাংয়ের বাজার অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধে শুধু হুয়াওয়ে নয়; আইফোন নির্মাতা অ্যাপলও ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে চীনে অ্যাপলের বাজার অংশীদারিত্ব তলানিতে নেমেছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে অ্যাপলের পণ্যে চীন বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষপাতী নন বলে জানিয়েছেন হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেন ঝেংফেই। সম্প্রতি ব্লুমবার্গকে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, বেইজিং এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিলে তিনিই সবার আগে প্রতিবাদ করবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ? স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ে যেকোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলে সেটা স্যামসাংয়ের জন্য আশীর্বাদই হবে। পাশাপাশি এ সুযোগে বিশ্বে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম সরবরাহে স্যামসাং শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলেও অবাক হওয়ার বিষয় হবে না।
দক্ষিণ কোরীয় কনগ্লোমারেট স্যামসাং হোম অ্যাপ্লায়েন্স (হোয়াইট গুডস), জাহাজ নির্মাণ ও সেমিকন্ডাক্টর, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেও নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসায় এখনো তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেনি। যেখানে ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো খাতে হুয়াওয়ে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল।
তবে স্যামসাং সম্প্রতি ফাইভজি নেটওয়ার্ক ব্যবসার বাজার ধরতে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ অন্তত ২০ শতাংশ বাজার দখলের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি সেলফোনের ব্যবসায়ও পাঁচ বছর আগের অবস্থানে ফিরে আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছে সংশ্লিষ্টরা। পাঁচ বছর আগে রেকর্ড মুনাফার পর সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি স্যামসাংয়ের সেলফোন বিভাগ।